‘বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন ক্যাপ্টেনবিহীন জাহাজ’

‘বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন ক্যাপ্টেনবিহীন জাহাজ’

এক দেড় বছর আগের বাংলাদেশের সঙ্গে এখনকার দলের কী বৈপরীত্য! দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, ভারতের মতো দলকে যারা অনায়াসে হারিয়েছে, সেই তারাই এখন নড়বড়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দাঁড়াতে পারলো না। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ফল মেনে নেওয়ার মধ্যে যুক্তি ছিল। ওখানে কঠিন পরিস্থিতি। বুঝলাম। কিন্তু দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার কাছে বিপর্যয় মেনে নেওয়ার মতো নয় অবশ্যই। এতে বাংলাদেশ ক্রিকেট শেষ হয়ে গেছে আমি বলবো না, তবে এই ফল কঠিন অবস্থায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিসিবিকে এখন ওঠে বসতে হবে। দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি তো মনে করি, বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন ক্যা্প্টেন ছাড়া জাহাজ। কোনো লক্ষ্য নেই, গন্তব্য নেই। লক্ষ্যহীন জাহাজ যেমন এদিক ওদিক ছুটে, বাংলাদেশ দলেরও সেরকম অবস্থা। দলে অসংখ্য মাতুব্বর। একেক জনের মত একরকম। দল চলছেও নানা মতে। এতদিনে একজন হেড কোচ ঠিক করতে পারলো না বিসিবি!
‘বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন ক্যাপ্টেনবিহীন জাহাজ’হ্যালসল ছিলেন, ওয়ালশ ছিলেন। তাদের যে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া যেত। কিন্তু বিসিবি প্রেসিডেন্ট বললেন, এই সিরিজে মাশরাফি ও সাকিব কোচ। আবার টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হলো সুজনকে। এত কোচ! সব মিলে জগাখিচুড়ি অববস্থা। নির্বাচকদের কাজকর্মে আমি সবচেয়ে বেশি হতাশ। গত দুই মাসে জাতীয় দলে খেলেছে ২৮ ক্রিকেটার। শেষ দুই টি-টোয়েন্টি ম্যাচে খেলোয়াড় পরিবর্তন হয়েছে ১০ জন। ঢাকাতে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে একসঙ্গে অভিষেক হয়েছে ৪ জনের। এগুলো হাস্যকর পরিসংখ্যান। জাকির মিডল অর্ডারে ব্যাট করেন। অথচ অভিষেকেই তাকে নামিয়ে দেওয়া হয় ওপেনিংয়ে। দলে মোহাম্মদ মিথুন ছিলেন। তিনি ওপনিংয়ে ব্যাট করে থাকেন। হ্যাঁ, দ্বিতীয় ম্যাচে তিনি রান পাননি। কিন্তু প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তাকে ওপেনিংয়ে নামাতেই পারত টিম-ম্যানেজমেন্ট।নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের অস্থিরতা আরো বেশি অস্থির করে দিয়েছে মাঠের খেলোয়াড়দের।আমি খেলোয়াড়দেরও দোষ দিতে চাই। আমার মনে হয়নি তারা খুব সিরিয়াসলি খেলেছে। জয়ের জন্য যেভাবে খেলা দরকার সেভাবে তারা খেলেছে বলে আমার মনে হয় না। তারা বড্ড চনমনে অস্থির ছিল। খুব নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখলাম। কেমন এমন হলো তা খুঁজে বের করতে হবে। আসলে ৪/৫ খেলোয়াড়ের উপর ভরসা করে ভালো কিছু আশা করা যায় না। প্রথম টি-টোয়েন্টি তামিম, সৌম্য মুশফিক রিয়াদের কারণে ভালো স্কোর হয়েছে। বাংলাদেশ হেরেছে, তবে হারটা সম্মানজনক। মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু প্রতি ম্যাচেই তো এদের পক্ষে ভালো করা সম্ভব নয়।
সিলেটে তামিম, মুশফিক রিয়াদরা রান পাননি, দলও ব্যর্থ। ৪/৫ জন খেলোয়াড়দের দিকে আর কত তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ? ভালো মানের খেলোয়াড় ওঠে না আসলে সামনে কঠিন সময় অপেক্ষ করছে। আমি হাথুরুসিংহেকে বাহাবা জানাই। তিনি দেখিয়ে দিয়ে গেলেন। তিনি যে ভালো কোচ, দলকে একট্রা করতে পারেন, সেটা প্রমাণ করলেন। দেশের মাটিতে এই শ্রীলঙ্কা কিছু দিন আগে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। কঠিন সময়ে দায়িত্ব নিয়ে দলকে অল্প ক’দিনেই দারুণ স্থানে নিয়ে গেলেন। বাংলাদেশ দলে দরকার এমন একজন কোচ, যিনি পুরো দলকে আবার একট্ট্রা করতে পারেন। খেলোয়াড়দের মনোবল এখন অনেক নিচে এখন। এটাকে আবার উপরে নিয়ে যেতে হবে। কাজটা করতে পারেন ভালো মানের একজন কোচ। কেন যে একজন হেড কোচ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না, আমি বুঝতে পারছি না। সামনেই শ্রীলঙ্কায় ত্রিদেশীয় সিরিজ। তার আগে একজন হেড কোচ নিয়োগ দেওয়া দরকার।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment